চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের ৩নং চাঁদনগর এলাকার সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের ছয়টি ঘর দীর্ঘদিন ধরে খালি পড়ে আছে। প্রকল্পের প্রকৃত উপকারভোগীরা কেউই বর্তমানে সেখানে বসবাস করছেন না। তাদের অনুপস্থিতিতে এখন ওই ঘরগুলোর কিছুতে আশ্রয় নিয়েছেন বাইরের জেলা ও এলাকার মানুষ।
ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, ছয়টি ঘরের মধ্যে দুটি ঘরে বসবাস করছেন কক্সবাজারের চকরিয়া ও নোয়াখালীর দুই পরিবার। স্থানীয়দের দাবি, প্রকৃত মালিকরা বছরের পর বছর অনুপস্থিত থাকায় মানবিক বিবেচনায় কিছু অসহায় পরিবারকে সেখানে থাকতে দেওয়া হয়েছে।
চকরিয়ার বাসিন্দা মো. শাহ আলম বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে পঙ্গু। স্থানীয়দের সহায়তায় এক বছর ধরে এখানে থাকছি। ঘরটি খালি থাকায় আমাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে।’
নোয়াখালীর ফাহেতা আক্তার জানান, ‘আমরা এই ঘরের প্রকৃত মালিক নই। ঘরের মালিক আবদুস শুক্কুর চার বছর আগে রাণীরহাট ভূমি অফিসের তহসিলদার একরাম সাহেবের মাধ্যমে আমাদের থাকতে দেন।’
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রকৃত উপকারভোগীরা অনুপস্থিত থাকায় কিছু স্থানীয় ব্যক্তি ঘরগুলোতে তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন, যাতে অন্য কেউ দখল নিতে না পারে।
স্থানীয় মনোয়ারা বেগম নামে এক নারী বলেন, ‘আমি চার বছর ধরে ওই ঘরে ছিলাম। ছয় মাস আগে মেয়ের বিয়ের কারণে বাবার বাড়ি রাজানগর চলে যাই। পরে ফিরে এসে দেখি ঘরে তালা দেওয়া, তাই তালা ভেঙে আবার ঢুকেছি।’
রাণীরহাট ভূমি অফিসের তহসিলদার মো. একরাম হোসেন বলেন, ‘ওখানে ছয়টি ঘরের মধ্যে দুই পরিবারের মূল মালিক মারা গেছেন। একটি পরিবার বৈধভাবে বসবাস করছে। বাকি ঘরগুলোর দখল বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো বৈধ নথি নেই।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করা। অথচ এখন প্রকৃত উপকারভোগীরা অনুপস্থিত, ফলে বাইরের লোকজন সেখানে বসবাস শুরু করেছে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা জেনেছি। প্রকৃত উপকারভোগীরা অনুপস্থিত থাকলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল— ‘একটি ঘর, একটি ঠিকানা’। কিন্তু রাঙ্গুনিয়ার চাঁদনগরে সেই ঠিকানাগুলো এখন অনেকের কাছেই অচেনা হয়ে পড়েছে।