চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর সিজিপিওয়াই এলাকার রেলওয়ের কবরস্থান, মসজিদ, মাজার ও আপদকালীন জলাশয় দখল করে কন্টেইনার ডিপো নির্মাণের ইজারা চুক্তি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ ও ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছেন রেলওয়ের শ্রমিক-কর্মচারীরা।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে কয়েক শতাধিক রেলকর্মী, তাদের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা মিছিলসহ সিআরবি এলাকায় রেলওয়ে জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অফিস ঘেরাও করেন। রেল ভবনে প্রবেশে বাধা পেলে তারা ‘লীজ বাতিল করো’, ‘কবরস্থান-মসজিদ-মাজার বাঁচাও’— এমন স্লোগানে রেল ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন।
পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মূল ফটক বন্ধ করে দিলে বাইরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন আন্দোলনকারীরা। বক্তারা অভিযোগ করেন, রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি বিভাগ কবরস্থান ও ধর্মীয় স্থাপনার জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে জালিয়াতির মাধ্যমে একটি বেসরকারি কোম্পানিকে জমি ইজারা দিয়েছে।
তারা বলেন, ‘রেলের ইতিহাসে কখনো ধর্মীয় স্থাপনা দখল করে প্রকল্প নেওয়া হয়নি। এবার রেল নিজেই আইন ভঙ্গ করছে। ধর্মীয় স্থান উচ্ছেদের চক্রান্ত বন্ধ না হলে সারাদেশে রেল ধর্মঘটে যাব।’
দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন রেলের জেনারেল ম্যানেজার মো. সুবক্তগীন। প্রায় আধাঘণ্টার বৈঠক শেষে তিনি আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘কবরস্থান-মসজিদ-মাজার থাকবে। আগামীকাল আমাদের কমিটি গিয়ে ডিমার্কেশন করবে।’ তার আশ্বাসে দুপুর ১টার দিকে আন্দোলন স্থগিত করেন রেল শ্রমিকরা।
বিক্ষোভে অংশ নেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান, রেলওয়ে কারিগরি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এসকে বাড়ি, সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হোসেন শহীদ, সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, এবং রেল এমপ্লয়িজ লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান শিশির প্রমুখ।
রেলের সঙ্গে সিসিবিএল-এর চুক্তিমতে, হালিশহর এলাকার ২১ দশমিক ২৯ একর জমি বাণিজ্যিকভাবে কন্টেইনার টার্মিনালের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। ওই জমির মধ্যে কবরস্থান, মসজিদ, নাল, খিলা, ভিটা, পুকুর ও কৃষি শ্রেণীর ভূমি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তবে জেলা প্রশাসনের রেকর্ডে দেখা গেছে, এসব জমির শ্রেণী রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চুক্তিপত্রে কৌশলে পরিবর্তন করেছে। শুধুমাত্র কবরস্থান অংশে (দাগ নং ১৫০৫৯) প্রকল্প বাস্তবায়নে আইনি বাধা থাকায় দাগ নম্বর ও শ্রেণী ওলট-পালট করে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষায় আন্দোলন চললেও রেল কর্তৃপক্ষ তা উপেক্ষা করছে বলে অভিযোগ করেন বক্তারা। গত মার্চে কবরস্থানের মধ্যে গোরখোদকের থাকার জায়গা উচ্ছেদ করা হয়েছিল বলেও তারা জানান।