শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫

বাঘাইছড়ির মাঝিপাড়া

সীমান্ত সড়ক ঘিরে জেগে উঠছে পাহাড়ি পর্যটন

বাঘাইছড়ি (রাঙামাটি) প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৫৭

পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার মাঝিপাড়া এখন পর্যটনের নতুন আকর্ষণে পরিণত হচ্ছে। পাহাড়, নদী, ঝরনা ও সবুজ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা মাঝিপাড়া সীমান্ত সড়ক খুলে দিচ্ছে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত।

স্থানীয় প্রশাসন ও বাসিন্দাদের প্রত্যাশা— এই সড়ক শুধু পর্যটন নয়, পাহাড়ি অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নেরও শক্ত ভিত্তি হয়ে উঠবে।

মাঝিপাড়া সীমান্ত সড়কটি পার্বত্য চট্টগ্রাম সীমান্ত সড়ক প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পুরো প্রকল্পটি শুরু হয়েছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে, যা অতিক্রম করবে রাঙামাটির রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, জুরাইছড়ি, বরকল ও বাঘাইছড়ি; এরপর খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, পানছড়ি ও মাটিরাঙ্গা হয়ে রামগড় উপজেলা সীমান্তে গিয়ে শেষ হবে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত এই বৃহৎ প্রকল্পে পাহাড়ের বুক চিরে তৈরি হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত আঁকাবাঁকা সীমান্ত সড়ক। পুরো সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ১,০৩৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ৩১৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে, ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা।

এই সড়ক ধরে চলতে চলতে চোখে পড়ে ঘন জঙ্গল, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা ছোট ছোট নদী আর মাঝে মাঝে ঝরনার কলকল ধ্বনি। ভোরবেলা পাহাড়ের মাথায় ভেসে বেড়ায় কুয়াশার চাদর, দুপুরে সূর্যের আলো পাহাড়ে ফেলে সোনালি আভা। এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্যই এখন পর্যটকদের টানছে মাঝিপাড়ায়।

সড়কটির পাশে রয়েছে ছোট ছোট পাহাড়ি গ্রাম—চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর বসতি। তাদের সংস্কৃতি, পোশাক, ঐতিহ্য, নৃত্য ও অতিথিপরায়ণতা ভ্রমণকারীদের কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতা হয়ে উঠছে।

স্থানীয় পর্যটন উদ্যোক্তারা জানান, সড়কটি চালু হওয়ায় বান্দরবানের রুমা-থানচি বা রাঙামাটির বিলাইছড়ি-বাঘাইছড়ির মতো দুর্গম এলাকায় যাতায়াত এখন অনেক সহজ হয়েছে। আগে যেখানে দিনের পর দিন হেঁটে যেতে হতো, এখন পর্যটকরা গাড়িতে করেই পৌঁছে যেতে পারছেন পাহাড়ি সৌন্দর্যের মাঝে।

শুধু পর্যটন নয়, মাঝিপাড়া সীমান্ত সড়ক খুলে দিচ্ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কৃষি পণ্য পরিবহনের নতুন সুযোগও। আগে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলগুলো থেকে পণ্য আনা-নেওয়া ছিল কষ্টসাধ্য, এখন তা সহজেই সম্ভব হচ্ছে।

স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘মাঝিপাড়া সীমান্ত সড়ক আমাদের স্বপ্ন বদলে দেবে। পাহাড়ের মানুষ এখন শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের আরও ভালো সুযোগ পাবে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সীমান্ত সড়ক সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ ভারতের মিজোরাম ও ত্রিপুরা রাজ্য এবং মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের সঙ্গে সরাসরি সড়ক সংযোগ স্থাপন করতে পারবে। ফলে সীমান্ত বাণিজ্য, পর্যটন ও আঞ্চলিক যোগাযোগে নতুন যুগের সূচনা ঘটবে পার্বত্য চট্টগ্রামে।

ভিডিও