চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টল সংসদ নির্বাচন হচ্ছে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর। অপেক্ষা ঘুচিয়ে শিক্ষার্থীরা সরাসরি ভোটে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনে করবেন। বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এই নির্বাচনে ভোটার মোট ২৭ হাজার ৫১৬ জন; তাদের মধ্যে ১১ হাজার ৩২৯ জন ছাত্রী।
ক্যাম্পাসের আইটি ভবন, নতুন কলা ভবন, বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান ও বাণিজ্য (বিবিএ) অনুষদ ভবনে ভোট দিতে পারবেন তারা। এছাড়া চাকসু ভবনের দ্বিতীয় তলায় দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ভোট কেন্দ্র করা হয়েছে। এ কেন্দ্রে শুধু দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা দুই নির্বাচন কমিশনারের তত্বাবধানের তাদের পছন্দের প্রতিনিধি মনোনয়নে ভোট দেবেন। পাঁচটি ভবনের ৬০টি কক্ষে প্রায় ৭০০টি বুথ করা হয়েছে শিক্ষাথীদের ভোট গ্রহণের জন্য।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ওএমআর ব্যালট শিটে শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন। চাকসুতে থাকছে চার পৃষ্ঠার এবং হল ও হোস্টেল সংসদের থাকছে এক পৃষ্ঠার ব্যালট।
যেভাবে দিতে হবে ভোট
ক. ভোটের দিন ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় বিশ্ববিদ্যালয় আইডি কার্ড সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা ভ্যালিড ব্যাংক পে-স্লিপ দেখিয়েও প্রবেশ করতে পারবেন।
খ. নির্ধারিত কেন্দ্রে প্রবেশের পর শিক্ষার্থীরা দায়িত্বরতদের পরিচয়পত্র দেখাবেন, ছবিযুক্ত ভোটর তালিকার সাথে মিলিয়ে দেখার পর নির্বাচনী কর্মকর্তা স্বাক্ষর করে মোট পাঁচটি ব্যালেট পেপার দেবেন।
গ. ১ থেকে ৪ নম্বর ব্যালেট চাকসু এবং ৫ নম্বর ব্যালেট হল বা হোস্টেলের।
ঙ. ব্যালেট পেপার নিয়ে গোপন কক্ষে প্রবেশের পর নির্ধারিত কলম ব্যবহার করে পছন্দের প্রার্থীর পাশের বৃত্ত সম্পূর্ণ ভরাট করতে হবে।
চ. প্রতিটি পদের জন্য একটি করে বৃত্ত ভরাট করতে হবে। কোনো পদের জন্য নির্ধারিত সংখ্যার বেশি বৃত্ত ভরাট করলে শুধু সেই পদের ভোট বাতিল হবে, অন্যান্য পদের ভোট বৈধ থাকবে।
ছ. চাকসুর নির্বাহী সদস্য পদে পাঁচটি, হল সংসদের জন্য তিনটি করে ভোট দেওয়া যাবে।
জ. ভোট কক্ষে ১,২,৩,৪ নম্বর লেখা এবং হলের নাম লেখা ব্যালেট বাক্স থাকবে।
ঝ. ভোট দেওয়ার পর নম্বর অনুযায়ী ব্যালেট পেপারগুলো বক্সে ফেলতে হবে। যেমন-১ নম্বর ব্যালেট ১ নম্বর বক্সে, ৪ নম্বর ব্যালেট ৪ নম্বর বক্সে।
ঞ. হল সংসদের নাম লেখা বক্সে হলের ব্যালেটটি ফেলতে হবে এবং ট. ভোট গণনা হবে ওএমআর মেশিনে।
কারা কোন কেন্দ্রে ভোট দেবেন
আইটি ভবন: সোহরাওয়াদী হলের শিক্ষার্থীরা। নতুন কলা ভবন: শাহজালাল, এফ রহমান ও আলাওল হলের শিক্ষার্থীরা। বিজ্ঞান অনুষদ ভবন: শাহ আমানত, মাস্টার দা সূর্য সেন হল। সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ ভবন: নওয়াব ফয়েজুন্নেসা, শামসুন নাহার, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং অতীশ দীপঙ্কর হলের শিক্ষার্থীরা। বাণিজ্য অনুষদ (বিবিএ) ভবন: প্রীতিলতা, বিজয় ২৪, শহীদ ফরহাদ হোসেন হল ও শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের শিক্ষার্থীরা
কোন পদে কত প্রার্থী
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২৬টি পদের বিপরীতে নির্বাচন করছেন ৪১৫ জন। আর ১৫টি হল ও একটি হোস্টেল সংসদের বিভিন্ন পদে ৪৯৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চাকসুর ভিপি পদে ২৪ জন, জিএস পদে ২২ এবং এজিএস পদে ২১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রধান তিনটি পদ ছাড়া অন্যান্য পদের মধ্যে খেলাধুলা ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক পদে ১২ জন, সহ খেলাধুলা ও ক্রীড়া বিষয়ক সাম্পাদক পদে ১৪, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৭, সহ সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৫, দপ্তর সম্পাদক পদে ১৭, সহ দপ্তর সম্পাদক পদে ১৪, ছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ দুইটি পদের একটি ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক পদে ১৩, সহ ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক পদে ১০, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১১, গবেষণা ও উদ্ভাবন সম্পাদক পদে ১২, সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ২০, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক পদে ১৫, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক পদে ১৭ জন করে, ক্যারিয়ার ডেভলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১৬, যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহ যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক পদে ১৪ জন, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে ৯, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ২০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
পাঁচটি নির্বাহী সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছেন ৮৫ জন। এ নির্বাচনে ছাত্রদল সাংগঠনিক নামে এবং ইসলামী ছাত্রশিবির ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ নামে প্যানেল দিয়েছে।
‘দ্রোহ পর্ষদ’ নামে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠন ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ সম্মিলিত ভাবে ‘বৈচিত্র্যের ঐক্যসহ’ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো অন্তত ১২টি প্যানেলের নাম শোনা যাচ্ছে।
হল সংসদ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়টি ছাত্র, পাঁচটি ছাত্রী এবং একটি হোস্টেল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন ৪৯৩ জন। এরমধ্যে সোহরাওয়ার্দী হলে সর্বোচ্চ ৫৩ জন প্রার্থী হয়েছেন। এ হল সংসদের ১১টি সম্পাদকীয় পদের বিপরীতে ৪৪ জন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
এর মধ্যে ভিপি পদে চারজন, জিএস এবং এজিএস পদে পাঁচজন করে লড়বেন। এছাড়া তিনটি নির্বাহী সদস্য পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৯ জন।
অন্যান্য ছাত্র হলগুলোর মধ্যে স্যার এফ রহমান হলে ৩৮ জন, আলাওল হলে ৩২ জন, অতীশ দীপঙ্কর হলে ৩৭ জন, শাহ আমানত হলে ৪৩ জন, শহীদ ফরহাদ হোসেন হলে ৪৫ জন, মাস্টার দা সূর্য সেন হলে ৩৭ জন, শহীদ আবদুর রব হলে ৩১ জন এবং শাহজালাল হলে ৩৪ জন প্রার্থী হয়েছেন।
ছাত্রী হলগুলোর মধ্যে অনেক পদে একক প্রার্থী রয়েছেন। নওয়াব ফয়েজুন্নেসা হলে ১৪টি পদের বিপরীতে প্রার্থী আছেন ১৭ জন। ১৪টি পদের মধ্যে ভিপিসহ ১১টি পদে একক প্রার্থী। আর জিএস, এজিএস এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক পদে দুই জন করে প্রার্থী আছেন।
এ হলে আদিবাসী এবং বাঙালি বড়ুয়া সম্প্রদায়ের ছাত্রীরা মিলে ‘হৃদ্যতার বন্ধন’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছেন।
শামসুন নাহার হলে ১৪ পদের বিপরীতে প্রার্থী আছেন ২২ জন। তার মধ্যে নির্বাহী সদস্যের তিনটি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন তিন জন। যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক, সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক, রিডিং রুম, ডাইনিং ও হল লাইব্রেরী সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক পদে প্রার্থী একজন করে।
আর খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে কোনো প্রার্থী নেই। এ হলে ভিপি, জিএস, সাহিত্য সংস্কৃতি এবং প্রকাশনা সম্পাদক পদে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছেন।
ছাত্রীদের হলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩০ জন প্রার্থী হয়েছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলে। সেখানেও সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক পদে প্রার্থী কেবল একজন।
এছাড়া বিজয়-২৪ হলে ২৮ জন, প্রীতিলতা হলে ২৬ জন করে প্রার্থী হয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলে আটটি সম্পাদকীয় পদ এবং দুটি নির্বাহী সদস্য পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ২০ জন। তবে নির্বাহী সদস্যের দুটি পদের বিপরীতে শুধু দুইজন প্রার্থী।