বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রামে প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশ : ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:০৬

প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে বিভাগীয় মহাসমাবেশ করেছেন বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ৩টায় নগরের লালদীঘি ময়দানে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাবেশে অংশ নেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা সাড়ে তিনটায় চট্টগ্রামের রাউজানের চুয়েট থেকে ১০টি বাসযোগে শিক্ষার্থীরা লালদীঘি ময়দানে এসে উপস্থিত হন। পরে তাদের সঙ্গে নগরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘কোটার নামে বৈষম্য, চলবে না, চলবে না’, ‘এই মুহূর্তে দরকার, কোটা প্রথার সংস্কার’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, সরকারি চাকরিতে বিএসসি প্রকৌশলীদের প্রতি বৈষম্য নিরসনে এবং প্রকৌশল খাতকে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের প্রভাবশালী গোষ্ঠীর হাত থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে তিন দফা দাবিতে ছয় মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন তারা। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সমাধান না আসায় ঢাকার শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা যমুনা অভিমুখে রওনা দিলে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। দীর্ঘ আন্দোলনে দাবি আদায় না হওয়ায় জনমত গঠন করতে এবং দেশের প্রকৌশল খাতের বিভিন্ন অনিয়ম ও বৈষম্য সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ করছেন তারা।

সমাবেশে প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সাকিবুল হক বলেন, বিএসসি শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৌশলী হন। অথচ দেশের একদল লোক, যাদের আগে টেকনিশিয়ান বলা হতো, তারা দেশের প্রকৌশল খাতকে দখল করে বসে আছেন। ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরা দশম গ্রেডে শতভাগ কোটার মাধ্যমে চাকরি করছেন। পাশাপাশি ৩৩ শতাংশ কোটার মাধ্যমে এইচএসসি সমমান সনদ নিয়ে নবম গ্রেডে বিসিএস সমমান পদে চাকরি করছেন। অথচ এখানে প্রকৌশলে স্নাতক শেষ করার পর বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে আমাদের এ জায়গায় আসতে হচ্ছে। এটি আমাদের সঙ্গে চরম বৈষম্য। প্রকৃত প্রকৌশলীদের বঞ্চিত করায় দেশের প্রকৌশল খাত আজ ধ্বংসের সম্মুখীন। অতি দ্রুত আমাদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়ে সরকারকে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। না হলে আমরা আরও তীব্র আন্দোলনের ঘোষণা দেব।’

শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সমাবেশে অংশ নেন ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সভাপতি মানজারে খোরশেদ আলম, সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খান আমিনুর রহমান, অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সভাপতি জানে আলম মো. সেলিম, ফোরাম অব ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টস চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সহসভাপতি মো. মমিনুল হক, চুয়েটের পেট্রোলিয়াম ও মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক বশির জিসান।

সমাবেশে ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সভাপতি মানজারে খোরশেদ আলম প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘আজ দেশে যদি কোটা প্রথা বিলুপ্ত করা হতো, তবে মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ছেড়ে মাঠে নামতে হতো না। একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে প্রকৌশল পেশাকে কলুষিত করে রেখেছে। দেশ যাতে দাঁড়াতে না পারে, তাই ষড়যন্ত্র করে প্রকৃত প্রকৌশলীদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। আমরা বিএসসি প্রকৌশলের শিক্ষার্থীদের তিন দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছি। এ সমস্যা নিরসনে সরকার যে কমিটি করেছে, তাদের অতি দ্রুত প্রতিবেদন জমা দিয়ে দেশের প্রকৌশল সমাজকে এ অস্থিরতা থেকে মুক্তি দিতে হবে।’

শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি

বেশ কয়েক মাস ধরে বুয়েট, চুয়েট, কুয়েট, রুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে প্রকৌশল দশম গ্রেডে উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবাইকে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হওয়াসহ তিন দাবিতে আন্দোলন করছেন।

তাদের অন্যান্য দাবির মধ্যে আছে নবম গ্রেডে ডিপ্লোমাধারীদের জন্য থাকা ৩৩ শতাংশ কোটা বাতিল করা, নবম গ্রেডে নিয়োগের জন্য বিএসসি প্রকৌশলী হওয়া বাধ্যতামূলক করা এবং বিএসসি ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ যেন ‘প্রকৌশলী’ পদবি ব্যবহার করতে না পারেন, সে বিষয়ে আইন পাস করে গেজেট প্রকাশ করা।

ভিডিও