শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মর্যাদা পাচ্ছে, তবে এখনো নেই কোনো এয়ারলাইন

প্রকাশ : ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:২৩

কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর জন্য প্রায় প্রস্তুত। রানওয়ে সম্প্রসারণ, নতুন আন্তর্জাতিক টার্মিনাল নির্মাণসহ সব ধরনের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রায় শেষের পথে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (আইসিএও) জানানো হয়েছে যে, আগামী ২ অক্টোবর থেকে বিমানবন্দরটি আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক মর্যাদা পাবে। কিন্তু এত বিশাল বিনিয়োগ ও সরকারি পরিকল্পনার পরও এখনো কোনো এয়ারলাইন কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালু করতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি।

সরকারের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনায় কক্সবাজার বিমানবন্দরকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাবে পরিণত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। রানওয়ে সম্প্রসারণের ফলে এখন ওয়াইড বডি বিমানও এখানে অবতরণ করতে পারবে। নতুন আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ভবন বছরে ১৮ লাখ যাত্রী সেবা দেওয়ার মতো সক্ষমতা অর্জন করবে। তবে এয়ারলাইনগুলো বলছে, কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের ধারাবাহিকভাবে আকৃষ্ট করার মতো অবকাঠামো, ব্র্যান্ডিং এবং বিনোদনের সুযোগ এখনো গড়ে ওঠেনি। এ কারণে বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে এখানে ফ্লাইট চালু করা এখনই সম্ভব হচ্ছে না।

কক্সবাজার বিমানবন্দর। ছবি: সংগৃহীত

ইউএস-বাংলা ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কক্সবাজার থেকে ব্যাংকক কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের কিছু রুট যাচাই করছে। তবে যাত্রীসংখ্যা পর্যাপ্ত না হলে রুট চালু করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিদেশি এয়ারলাইনগুলোও এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তারা বলছে, ফ্লাইট চালুর আগে বিমানবন্দর ও এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বিস্তারিতভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কক্সবাজারের বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হলেও পর্যটন খাতের সার্বিক উন্নয়ন না হলে এ প্রকল্প কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাবে না। বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো ব্র্যান্ডিং, মানসম্মত রিসোর্ট, বিনোদন সুবিধা ও নিরাপত্তার পর্যাপ্ত নিশ্চয়তা কক্সবাজারে এখনো অনুপস্থিত। এছাড়া বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) অধীনে সাবরাং, নাফ ও সোনাদিয়ায় তিনটি পর্যটন পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হলেও দীর্ঘ ৯ বছরে একটিও পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। এর মধ্যে পরিবেশগত কারণে সোনাদিয়া প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে, আর সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ ধীরগতিতে চলছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আশা করছে, অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সীমিত আকারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হতে পারে এবং ধীরে ধীরে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়বে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার যাত্রী কক্সবাজার বিমানবন্দর ব্যবহার করেন, মৌসুমে যা বেড়ে আড়াই হাজার ছাড়িয়ে যায়। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে যাত্রীসেবার সক্ষমতা দ্বিগুণেরও বেশি হবে বলে কর্তৃপক্ষ মনে করছে।

তবে এখনো বড় প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—পর্যটক আকর্ষণে যথাযথ পদক্ষেপ, বৈশ্বিক ব্র্যান্ডিং এবং বাণিজ্যিক সাফল্যের নিশ্চয়তা ছাড়া বিশাল এ বিনিয়োগ কতটা কার্যকর হবে। কক্সবাজারকে দক্ষিণ এশিয়ার এভিয়েশন হাবে রূপান্তরের স্বপ্ন বাস্তবায়ন অনেকটাই নির্ভর করছে পর্যটন শিল্পের পূর্ণাঙ্গ বিকাশের ওপর।

সূত্র: টিবিএস

ভিডিও