শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

ভুয়া তথ্যে রোহিঙ্গারা হয়ে যাচ্ছে ‘বাংলাদেশি নাগরিক’

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৪:০৭

নাফ নদ পেরিয়ে বাংলাদেশে ২০১৭ সালে অনুপ্রবেশ করেছেন ৩৫ বছর বয়সী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নারী মিনারা। এরপর দীর্ঘ ৮ বছর কেটে গেছে। এর মধ্যে রপ্ত করেছেন বাংলা ভাষা, হাসিনা পরিচয়ে করিয়েছেন জন্মনিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র। অবশেষে পাসপোর্ট করতে নারায়ণগঞ্জে এসে আটক হয়েছেন।

গতকাল বুধবার (২৭ আগস্ট) ফতুল্লার ভূইগড়স্থ আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে পাসপোর্ট তৈরি করতে এলে রোহিঙ্গা তরুণী মিনারা ওরফে হাসিনাকে (২৯) আটক করে পুলিশ। তিনি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার দক্ষিণ হৃলার জালাল আহম্মেদের মেয়ে।

জানা যায়, মিনারার মতো গত তিন মাসে আরো তিনজন রোহিঙ্গা নাগরিককে নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস থেকে আটক করা হয়েছে। তাদের সবার ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র কক্সবাজার, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই নম্বর জোন এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নের ঠিকানায় বানানো।

জানা গেছে, রোহিঙ্গা পাচারের নতুন ‘ট্রানজিট রুট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে নারায়ণগঞ্জের পাসপোর্ট অফিস। দালালরা নানাভাবে প্রলুব্ধ করে ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের বের করে এনে টাকার বিনিময়ে নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে পাচারের চেষ্টা করছে।

পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে কয়েকটি বড় দালাল চক্র সক্রিয়। তারা বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগসাজশ করে রোহিঙ্গাদের জন্ম নিবন্ধন বানায়। এরপর সেই কাগজ দিয়ে এনআইডি করে, আবার পাসপোর্ট অফিসে নিয়ে আসে। মাঝে মধ্যে রোহিঙ্গা নাগরিক আটকের খবর শোনা গেলেও দালালদের গ্রেপ্তার করতে দেখা যায় না।

নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক শামীম আহমদ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আটকের ক্ষেত্রে আমরা কোনো প্রকার ছাড় দিচ্ছি না। বিষয়টি সরকারের কঠোর নজরদারিতে রয়েছে। আমরা নিয়মিতই অভ্যন্তরীণ তদারকি বাড়াচ্ছি, যাতে কোনোভাবেই অবৈধভাবে রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে না পারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ পাসপোর্ট করতে আসেন। সেই ভিড়ের ভেতরে কারো ভুয়া বা জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে পাসপোর্ট করতে চাওয়ার প্রবণতা আমরা থামাতে বদ্ধপরিকর। যতই কৌশল ব্যবহার করা হোক না কেন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও অন্যান্য তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখাই না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে আমাদের সমন্বয় জোরদার করা হয়েছে। যেকোনো সন্দেহজনক আবেদনপত্র সঙ্গে সঙ্গে যাচাই করা হচ্ছে। ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে কেউ পাসপোর্ট করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে এবং আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করা হবে।’

ফতুল্লা মডেল থানার ওসি শরিফুল ইসলাম জানান, দালালের মাধ্যমে ওই রোহিঙ্গা তরুণী বাংলাদেশি সেজে পাসপোর্ট তৈরি করে বিদেশে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। এর পেছনে কারা জড়িত, পাসপোর্ট তৈরির কাগজপত্র কারা জোগাড় করে দিলেন, তার অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

এর আগে গত ১৮ আগস্ট আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে আটক হন মো. আরিয়ান নামের এক যুবক। পরে জানা যায়, তার আসল নাম মো. আনোস। তিনি কক্সবাজারের উখিয়া থানার ২৬ নম্বর লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ে তার নাম রোহিঙ্গা ডাটাবেজে মিলে যায়। ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে পাসপোর্ট করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি।

গত ৩ জুন আটক হন সুমা আক্তার নামের এক নারী। তিনি জন্মস্থান ঢাকার কেরানীগঞ্জ দেখিয়ে বাবা-মা ও স্বামীর নামসহ পূর্ণ কাগজপত্র জমা দেন। বাবা, মা ও স্বামীরও আলাদা এনআইডি ছিল। তদন্তে দেখা যায়, সবগুলোই জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি। অর্থাৎ একটি গোটা পরিবারকে দালালচক্র বাংলাদেশি নাগরিক বানিয়ে ফেলে।

গত ২৫ মে একই অফিস থেকে আটক হয় কিশোর আব্দুল আজিজ। বয়স আড়াল করে পাসপোর্টের আবেদন করেছিলেন তিনি। সঙ্গে জমা দেন জন্ম নিবন্ধন ও মা-বাবার এনআইডি। কিন্তু যাচাইয়ে দেখা যায়, সবকটি কাগজপত্রই জাল। তার আসল বয়স আঠারো বছরের নিচে এবং তিনি রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা। শুধু সে নয়, তার মা-বাবারও ভুয়া এনআইডি ছিল। সূত্র : কালের কণ্ঠ

ভিডিও