শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট তার ২.৯ বিলিয়ন ডলার বেলআউটে পরিবর্তন চাওয়ার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল শুক্রবার বলেছে, শ্রীলঙ্কার কঠোর কৃচ্ছ্রতার পদক্ষেপ ‘সুফল দিচ্ছে’ উল্লেখ করে বলেছে, এ কৃচ্ছ্রতা অবশ্যই ধরে রাখতে হবে।
কলম্বো থেকে এএফপি এ খবর জানায়, বামপন্থী নেতা অনূঢ়া কুমার দিশানায়েকে গত মাসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন। তিনি কর বৃদ্ধি প্রত্যাহার, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি ও গত বছর কলম্বোর অজনপ্রিয় আইএমএফ বেলআউট কর্মসূচি পুনর্বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
চলতি সপ্তাহে কলম্বোতে তহবিল প্রতিনিধিদের সাথে দিশানায়েকের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তিনি নিম্নআয়ের পরিবারের ওপর করের বোঝা কমাতে চান বলে জানান।
জবাবে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক ঋণদাতা সংস্থাটি শেষ অবলম্বনের ওপর জোর দিয়ে জানায়, শ্রীলঙ্কার এই কষ্টার্জিত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে বিপন্ন না করাটা অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
ওয়াশিংটনে মুখপাত্র জুলি কোজ্যাক বলেন, ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পুনরুজ্জীবন, মুদ্র্যস্ফীতি হ্রাস, রিজার্ভ বৃদ্ধি ও রাজস্ব সচল করার ক্ষেত্রে এ সংস্কার প্রচেষ্টা ফল দিচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, এখনো উল্লেখযোগ্য দুর্বলতা ও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। আর এর অর্থ হল- সংস্কারের গতি ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।’
নেতারা পুরুদ্ধার পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজস্ব সংগ্রহ ও ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে যথেষ্ট কঠোরতা অবলম্বন করছেন বলে আইএমএফ সন্তুষ্ট হলেই কেবল শ্রীলঙ্কা আইএমএফ-এবর কাছ থেকে ৩৩৬ মিলিয়ন ডলারের চতুর্থ কিস্তি পেতে পারে।
দিশাসানায়েকের কার্যালয় বৃহস্পতিবার বলেন, তিনি আইএমএফ কর্মসূচির উদ্দেশ্যগুলো অর্জনে একটি ‘বিস্তৃত চুক্তি’র বিষয় পুনঃনিশ্চিত করলেও ‘জনগণের ওপর বোঝা কমাতে বিকল্প উপায়ের মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যগুলো অর্জনের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন’।
নতুন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ডে ১২.৫ বিলিয়ন পুনর্বিন্যাস করতে একটি চুক্তি করতে চান এবং অর্থকষ্টে থাকা জাতির জন্য আরো কিছুটা ছাড় নিশ্চিত করতে চান।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দিশানায়েকে খুবই অল্প কিছু ক্ষেত্রে আইএমএফ চুক্তির শর্তাদি পরিবর্তন করতে পারবেন।
কলম্বো-ভিত্তিক অর্থনৈতিক থিংক ট্যাংক অ্যাডভোকাটার মুর্তজা জাফরজি দিশানায়েকের নির্বাচনের পরপরই এএফপিকে বলেছিলেন, এমন কিছু রেডলাইন আছে, যেগুলোতে আইএমএফ আলোচনায় রাজি হবে না।’
তিনি বলেন, আইএমএফ বেলআউটের মূল শর্তগুলো পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। এর মধ্যে অর্থ ছাপানোর ওপর নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি আগের প্রশাসনের সম্মত রাজস্ব ও ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
শ্রীলঙ্কা ২০২২ সালে দেশটির সর্বকালের মন্দ আর্থিক সংকটের সময় বৈদেশিক মুদ্রা ফুরিয়ে যাওয়ার পরে দেশটি ৪৬ বিলিয়ন বৈদেশিক ঋণ খেলাপি হয়।
২০২৩ আইএমএফ বেলআউট খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের ঘাটতি দূর করতে সাহায্য করে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধিতে ফিরিয়ে এনেছিল। কিন্তু এর কঠোর কৃচ্ছ্রতার কারণে লাখ লাখ লোককে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে।
দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে জনগণের অসন্তোষের প্রেক্ষিতে এক সময়ের প্রান্তিক বামপন্থী দলের সদস্য দিশানায়েকে নির্বাচনে জিতে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট হন। দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দেশটিতে অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল।
দিশানায়েকে শপথ নেওয়ার কয়েকদিন পর আগামী মাসে আগাম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডাক দেন।
বন্ডহোল্ডার বা আইএমএফের সাথে যে কোনো নতুন চুক্তির জন্য পরবর্তী সংসদের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে, যার প্রথম অধিবেশন ২১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
শ্রীলঙ্কার জন্য সংস্কার ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ : আইএমএফ
প্রকাশ : ৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১:৪৮ : অপরাহ্ণ |
বিভাগ : আর্ন্তজাতিক
36 বার