চট্টগ্রামসহ দেশের ১২ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের অপসারণ করা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের ১৪ পৌরসভাসহ দেশের ৩২৩ পৌরসভার কাউন্সিলরদেরও অপসারণ করা হয়। একইসঙ্গে চট্টগ্রামসহ দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের সদস্যদেরও অপসারণ করা হয়েছে। গতকাল এ বিষয়ে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। অপসারণকৃত সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের পরিবর্তে কারা দায়িত্ব পালন করবেন তা স্পষ্ট করেনি মন্ত্রণালয়। তবে পৌরসভায় প্রশাসকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের এবং জেলা পরিষদে প্রশাসকের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে।
এর আগে গত ১৯ আগস্ট পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে (চসিক) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আনোয়ার পাশাকে প্রশাসক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়া চট্টগ্রামের পৌরসভাগুলোতে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ–পরিচালক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং সহকারী কমিশনার ভূমি প্রশাসক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে গতকালের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী উপজেলা সদরের পৌরসভায় প্রশাসকের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের এবং জেলা পরিষদে প্রশাসকের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের কমিটি দায়িত্ব পালন করবেন।
যেভাবে চলবে জেলা পরিষদ: জেলা পরিষদের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’–এর ধারা ৩ দ্বারা সন্নিবেশিত ৮২ক (২) ধারা মোতাবেক জেলা পরিষদের প্রশাসকের কর্মসম্পাদনে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করবেন কমিটির সদস্যরা। প্রশাসক সভাপতি এবং জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী হবেন কমিটির সভাপতি। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী, জেলা সনাজসেবা বিভাগের উপপরিচালক, সমাজসেবা, জেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী– কমিটির সদস্যগণ জেলা পরিষদ সদস্যের ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবেন। জেলা পরিষদের অধিক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উক্ত কমিটির সুপারিশ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। ন্যূনতম ৫০ শতাংশ সদস্যের উপস্থিতিতে কোরাম গঠিত হবে। যদি কোনো সভায় কোরাম না হয়, তাহলে ঐ সভার সভাপতি এরূপ সভা মূলতবী করবেন অথবা যুক্তিসংগত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে প্রয়োজনীয় কোরাম হলে সভা পরিচালনা করবেন।
যেভাবে চলবে পৌরসভা : গঠিত ৭ সদস্যের কমিটি স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এর ধারা ৪২ক (২) অনুযায়ী জেলা সদর পৌরসভার প্রশাসকের কর্মসম্পাদনে সহায়তা প্রদান করবেন। কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন– উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কমিটির সদস্যবৃন্দ স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এর ধারা ৪২ ক (৩) অনুযায়ী কাউন্সিলর–এর ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটির প্রত্যেক সদস্য প্রতিটি সভার জন্য উৎসে কর কর্তন সাপেক্ষে বিধিমোতাবেক সম্মানিভাতা প্রাপ্য হবেন। সম্মানির পরিমাণ পৌরসভার আয় অনুযায়ী নির্ধারণ করা যাবে তবে তাতিন হাজার টাকার অধিক হবে না।
চসিকের বাকি সিদ্ধান্ত আসতে পারে আজ : চসিকের কাউন্সিলরদের অপসারণ করা হলেও তাদের দায়িত্বগুলো কারা পালন করবেন এ বিষয়ে আজকালের মধ্যে সিদ্ধান্ত হতে পারে। চসিকের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি আজাদীকে নিশ্চিত করেন। অবশ্য চসিকের ১৪ ওয়ার্ডে সংস্থাটির তিনজন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জাতীয়তা ও চারিত্রিক সনদ মৃত ব্যক্তির উত্তারধিকার সনদ এবং জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ ইস্যু করে আসছেন। গত ১৮ ও ২৩ সেপ্টেম্বর পৃথক দুটি অফিস আদেশে তাদের এ দায়িত্ব দেন চসিকের সচিব।
এর মধ্যে চসিকের ১ ও ৫ নম্বর অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ৭, ৯, ১১, ১৩ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করছেন। ২ ও ৩ নম্বর অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিন ফেরদৌসী ৪, ৬, ১৮ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের এবং ৪ ও ৬ নম্বর অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা রক্তিম চৌধুরী ১৫, ২১, ২৩, ২৫ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব পালন করছেন।
এর আগে গত ২৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চসিকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চসিকের ৩৯ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস করছেন না। নিয়মিত অফিস করেন ৯ জন এবং ৭ জন অনিয়মিত অফিস করেন। প্রসঙ্গত, চসিকে ওয়ার্ড আছে ৪১টি। এত ৪১ জন সাধারণ এবং ১৫ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর আছেন। সবমিলিয়ে কাউন্সিলর আছেন ৫৫ জন। এদিকে গত ৮ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ধারা ১১৭ (১) অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন সমূহের প্রশাসকগণকে সিটি কর্পোরেশন অধিক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের নাগরিক সেবা বিশেষ করে জাতীয়তা ও চারিত্রিক সনদ, মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারসনদ ইত্যাদি প্রদানের ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। অর্থাৎ সিটি কর্পোরেশন (কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরণের দায়িত্ব, কার্যাবলী ও সুযোগ সুবিধা) বিধিমালা, ২০১২ এর উপবিধি ৩ (৩) অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরগণ মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার, জাতীয়তা ও চারিত্রিক সনদ প্রদানের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবেন। এছাড়া বর্তমান প্রেক্ষাপটে সিটি কর্পোরেশনের কোন কাউন্সিলর কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে বা কোনো কাউন্সিলরকে কর্মস্থলে পাওয়া না গেলে নিরবচ্ছিন্ন নাগরিক সেবা নিশ্চিতকরণে জনস্বার্থে প্রশাসক তাঁর উপর অর্পিত ক্ষমতাবলে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা বা অন্য কোনো কর্মকর্তাকে বা ক্ষেত্র বিশেষে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এর ধারা ৩ দ্বারা সন্নিবেশিত ধারা ২৫ ক (২) অনুযায়ী নিযুক্ত কমিটির সদস্যদেরকে এ ক্ষমতা প্রদান করতে পারবেন।